top of page

বাস্তুকার রবীন্দ্রনাথ

অনির্বাণ দাস


শিলাইদহের কুঠিবাড়ি


                  আমরা তো রবীন্দ্রনাথকে কবি,লেখক হিসেবেই চিনি,জানি।তিনি আমাদের স্মরণে-স্বপনে-মননে।তবে আজ অন্য রবীন্দ্রনাথকে দেখবো।এটা রবীন্দ্রনাথের জীবনে ছোটবেলার একটা মজার ঘটনা। রবীন্দ্রনাথ একবার তাঁর জ্যোতিদাদার সঙ্গে শিলাইদহে গেছেন।কুঠিবাড়িতে যে ঘরে তিনি থাকতেন, সেখানে মালী ফুল তুলে এনে ফুলদানিতে সাজিয়ে দিত।সেই দেখে একদিন তাঁর মাথায় খেয়াল চাপলো ফুলের রঙিন রস দিয়ে কবিতা লিখতে।শুরু করলেন ফুলের পাপড়ি টিপে টিপে রস বের করে রঙ্গিন কালি তৈরি করতে। কিন্তু রসটুকু পাওয়া যায় সে আর কলমের মুখে উঠতে চায় না।লেখাও আর এগোয় না।তখন তাঁর মনে হল এই রস বের করার একটা কল তৈরি করতে হবে।দরকার একটা ছেঁদাওয়ালা কাঠের বাটি, আর পেষণ দন্ড।যেটা ওই বাটিটার ওপর ঘোরানো হবে।আর সেটা ঘোরানো হবে দড়িতে-বাঁধা একটা চাকায়।খুব সহজ পদ্ধতি। জ্যোতিদাদাকে দরবার জানালেন। জ্যোতিদাদার হুকুমে ছুতোর এল কাঠকোঠ নিয়ে।জোগাড় হল হামানদিস্তের নোড়া। সেই কল তো তৈরি হল।এবার হাতে কলমে কাজ। ফুলে-ভরা কাঠের বাটিতে দড়িতে-বাঁধা নোড়া যতই ঘোরানো হয় ফুল পিষে কাদা হয়ে যায়, রস আর বেরোয় না।ফুলের রস আর কলের চাপে ছন্দ মিলল না।ব্যাপারটা সেখানেই ইতি।

                 রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্যাপারটাকে এভাবে বলেছেন, 'জীবনে এই একবার এঞ্জিনিয়ারি করতে নেবেছিলুম। যে যা নয় নিজেকে তাই যখন কেউ ভাবে, তার মাথা হেঁট করে দেবার এক দেবতা তৈরি থাকেন, শাস্ত্রে এমন কথা আছে। সেই দেবতা সেদিন আমার এঞ্জিনিয়ারির দিকে কটাক্ষ করেছিলেন, তার পর থেকে যন্ত্রে হাত লাগানো আমার বন্ধ, এমন-কি সেতারে এসরাজেও তার চড়াই নি।’

                   বলেছেন বটে, তবে রবীন্দ্রনাথ ফুলের কালিতে পরেও ছবি এঁকে খুশি হয়ে অন্যদের দিয়েছেন, যদিও সে কালির অস্তিত্ব বেশিদিন ছিল না।আবার শান্তিনিকেতনে কোণার্ক,শ্যামলী ইত্যাদি বাড়ি তৈরিতে কবির পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয়েছিল-সে অন্য কাহিনী।


তথ্যসূত্র: ছেলেবেলা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


লেখক পরিচিতি

অনির্বাণ দাস, রবীন্দ্রমেলার সদস্য

コメント


m4nPNpRzn2BaiWQu_7.jpg

© 2023 by Train of Thoughts. Proudly created with Wix.com

bottom of page