top of page

আমার রবীন্দ্রনাথ

শাশ্বতী বাগচী


‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে

সব গাছ ছাড়িয়ে

উঁকি মারে আকাশে।

মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়,

একেবারে উড়ে যায়;

কোথা পাবে পাখা সে?’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এই নামটা লেখার সঙ্গে সঙ্গেই যেন সব লেখা থেমে যায়। একটা নামের মধ্যেই যেন সব ভাবনা চিন্তার অবসান ঘটে। কবিকে নিয়ে লেখা বা কিছু বলা খুব কঠিন কাজ, আমার পক্ষে তো বটেই।তবু কিছু থেকে যায় যা সবার সাথে ভাগ করে নিতে ইচ্ছে হয়।

রবি ঠাকুরের কিছু কবিতা বিশেষ করে ছোটদের কবিতা আমার খুব পছন্দের, কারণ ছোটবেলায় যখন পড়েছি তখন শুধুমাত্র স্কুলে পড়া দেবার জন্য পড়েছি। সেই সময় শিশুমনে কবিতাগুলোর একরকম ছবি মনের মধ্যে আঁকা ছিল।

একটু বলি, ছোট সময় যখনই তাল গাছের দিকে তাকাতাম ভাবতাম আহারে! কি কষ্ট গাছটার! এখনো তাকাই-মনে পড়ে কবিতাটা; বুঝতে পারি কষ্টটা শুধুমাত্র ওর নয় আমার নিজেরও...

‘তার পরে হাওয়া যেই নেমে যায়,

পাতা কাঁপা থেমে যায়,

ফেরে তার মনটি

যেই ভাবে, মা যে হয় মাটি তার

ভালো লাগে আরবার

পৃথিবীর কোণটি।’

সত্যিই তো আমরা সবাই তো চাই উড়ে যেতে। কিন্তু যখনই আমাদের অশান্ত মন শান্ত হয়, আমরা বুঝতে পারি আমাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটা পরিধি আছে। আমরা ভালবাসি আমাদের সেই পরিধিটাকে, সেই চেনা গণ্ডিটাকে, যেটার থেকে বেরিয়ে যাওয়া সহজ কথা নয়।

'এক যে ছিল চাঁদের কোণায়

চরকা - কাটা বুড়ি

পুরাণে তার বয়স লেখে

সাতশো হাজার কুড়ি ।'

ছোটবেলায় কত দিন সেই বুড়িকে খোঁজার চেষ্টা করেছি আর এখন চাঁদের দিকে তাকালেই কি অসম্ভব ভালোলাগায় মনটা ভরে যায়।

‘পুতুল ভাঙ্গা’ কবিতাটির কথাই ভাবি-

‘মা গো, আমি জানাই কাকে?

ওঁর কি গুরু আছে?

আমি যদি নালিশ করি

এক্‌খনি তাঁর কাছে?’

অথবা

‘ওঁর যদি সেই পুতুল নিয়ে

ভাঙেন কেহ রাগে,

বল দেখি, মা, ওঁর মনে তা

কেমনতরো লাগে?’

আমরা সবসময় ছোটদের শাসন করি, ওদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আমাদের কাছে বড় অপ্রয়োজনের। ঘরের বাড়তি জিনিস ছাড়া কিছু নয়। আমরা ফেলে দিই পরিষ্কার করার আনন্দে। সত্যি ওরা যদি নালিশ করে আমাদের নামে? ভাববার বিষয়!

আরেকটি কবিতা এই মুহূর্তে আমার কাছে বড়ই প্রাসঙ্গিক লাগে।

রবিবার সে কেন, মা গো,

এমন দেরি করে?

ধীরে ধীরে পৌঁছয় সে

সকল বারের পরে।

এটাতো যেন সব ছোটদের মনের কথা। একটা সময় আমিও কিছুদিন শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। শনিবার আসলেই মনটা অদ্ভুত ভালোলাগায় ভরে যেত। এখন এই মুহূর্তে আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে বড় দরকার ‘রবিবার’ আলাদা করে। আমরা ভুলতে বসেছি রবিবারের সঙ্গে সোম মঙ্গলের তফাৎ। এমনিতেই বাচ্চারা ইদানিংকালে রবিবারে বড় বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবুও তো দিনটির নাম রবিবার।


আরো অনেক অনেক কবিতা, গান বা যেকোনো লেখা যখন যেটা পড়ি মনে হয় সেটা বোধহয় সেই সময়ের কথাই বলা হয়েছে। কি অসাধারণ দূরদর্শিতা, অসাধারণ অনুভূতিসম্পন্ন একজন মানুষ! কতদিন আগের লেখা অথচ বর্তমান পরিস্থিতির সাথে মিলেমিশে একাকার।

কবির কথা বলার মত সাহস আমার নেই, শুধুমাত্র আমার ভালোলাগাটুকু ভাগ করে নিলাম আমার প্রিয়জনদের সঙ্গে।

লেখিকা পরিচিতি

শাশ্বতী বাগচী, রবীন্দ্রমেলার সদস্যা।

Comments


m4nPNpRzn2BaiWQu_7.jpg

© 2023 by Train of Thoughts. Proudly created with Wix.com

bottom of page