রবীন্দ্রনাথ ও নারী প্রগতি
- Rabindramela Berhampore
- Oct 11, 2021
- 2 min read
বাসব মুখার্জী

'প্রগতি' এই শব্দটির মধ্যেই রয়ে গেছে গতিরাগের প্রকাশ।সেই গতি গত-বিগত-আগত সবকিছুকে মিলিয়েমিশিয়ে বিশিষ্ট এক সঙ্গত জীবনবোধ নিয়ে হাজির বা উপস্থিত রবীন্দ্রসাহিত্যে।রবীন্দ্রসাহিত্য আসলে জীবনচলিষ্ণুতারই ধারক ও বাহক।রবি ঠাকুরের সেই জীবনদর্শনটি তাঁর কাব্যে,কথাসাহিত্যে,নাটকে বা অন্যান্য সাহিত্যভুবনে বারেবারেই ঘুরেফিরে এসেছে।মনে পড়ে 'বলাকা'-র কথা।সেখানে তো "হেথা নয়,হেথা নয়" বলে "অন্য কোথা" আর অন্য কোনখানে যাবার আর্তিআকুলতা সোচ্চারে প্রকাশ পেয়েছে।'বলাকা'-র এই গতিরাগটি যেন জীবনের সেই অগ্রগতিরই সূচক।আর সেই অগ্রগতি যেন অন্তঃসলিলা ফল্গুধারার মতনই প্রগতির কথা ব্যঞ্জিত করে।এই প্রগতি বা অগ্রগতির চুম্বকশব্দটি গতি,আর এই গতি আসলে বহমান জীবনের মননের বহতানদী।চিন্তনের গতিধারা ও চেতনার গতিরেখাটিই সেখানে প্রবল এবং প্রধান ভূমিকায় বিশিষ্ট হয়ে ওঠে।তাই তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলির মধ্যে সেই বোধটিই তীব্রতা দৃঢ়তা প্রগাঢ়তা নিয়ে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের ছটায় আলোকবর্ণা।ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি তো আসলে আধুনিক জীবনভঙ্গিমারই ফসল।বাহ্যিক চটকচমক নয়,অন্তরের রূপলাবণ্যময় চৈতন্যের বিভাতেই তারা মাত করেছে এই বিশ্বসংসারকে।আর তাই 'চোখের বালি'-তে আমরা বিনোদিনীর মতো এক দৃঢ়চেতা নারীকে দেখি।বিনোদিনীর প্রকৃতসম্পদ তার শরীরীআশ্লেষ নয়,তার তীক্ষ্ণ মেধা,যে মেধার কাছে হার মেনেছে সমাজের গড়পড়তা বাকিরা।'চতুরঙ্গ'-র দামিনী নিজের নিজস্ব স্ককীয় মৌলিক সত্তা নিয়ে উচ্ছল উজ্জ্বল।''শেষের কবিতা'-র লাবণ্য তো এমনই এক বিরল ব্যতিক্রমী চরিত্র যে তার বুদ্ধিদীপ্ত আর বুদ্ধিদৃপ্ত উচ্চারণের উপস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রেক্ষাপটে সংলাপময় মুখর হয়ে এক অন্যতর ভিন্নতর দর্শনবোধে আমাদের প্রাণিত করে,মুগ্ধ করে,বিস্মিত করে।'স্ত্রীর পত্র'-র মৃণাল "সেইসময়"-এর ক্যানভাসে যে কথা বলে তা তো প্রগতির চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা চিন্তাচেতনার জগতে।নিঃসঙ্গতা এই আধুনিক সময়েরই ক্ষত,সেই রক্তক্ষরণ,সেই "অনন্বয়ের সংকট" জীবনের পরতে-পরতে অগ্রগতি আর প্রগতির পথে বাধা হয়ে এসেছে।'রক্তকরবী'র- নন্দিনী সেই বাধাকে চূর্ণ করার সংকল্পে ভাস্বর।মূঢ় জড়তার "বাঁধ ভেঙে" দেবার আহ্বানধ্বনি অন্তর্লোকে শেষঅবধি শেষপর্যন্ত শুনতে পেয়েছিল 'ঘরে বাইরে'র- বিমলাও।অগ্নিশুদ্ধ হয়েছিল সে...সেই অগ্নিস্নানে "শুচি" হয়ে উঠেছিল "ধরা"...শুদ্ধ,পরিশুদ্ধ,বিশুদ্ধ হয়ে উঠেছিল আমাদের মন মনন চিন্তা চেতনাও।'যোগাযোগ'-এর কুমুর চেতনার আলোকবর্তিকাটি তো আজকের এই যান্ত্রিকযুগে আরওই প্রাসঙ্গিক।'চার অধ্যায়'-এর এলার কাহিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের কূটনীতির কূটকচালির অন্ধকারময় দিকটি।রবি ঠাকুরের নায়িকারা এভাবেই ইশারা-ইঙ্গিতে প্রগতির পতাকাটি বয়ে নিয়ে চলে।তাদের আচারআচরণের মধ্যে সেই বিষয়টিই সযতনে লালিত।নারীপ্রগতি কোনও তত্ত্বকথার কচকচি নয়,তা যে জীবনের জল-মাটি-বাতাস মেখে "আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে"-র উদার উদাত্ত সুর...রবি ঠাকুর সেই প্রগতির কথাই আমাদের বলেছেন।

লেখক পরিচিতি
বাসব মুখার্জ্জী,রবীন্দ্রমেলার সদস্য।
Comentarios