top of page

রবীন্দ্র ভাবনায় বর্ষা

শাশ্বতী বাগচী


দহনে আবৃত নারী হৃদয়

অভিশাপে নয়ন জুড়ে বৃষ্টি নামে।

মনের গভীরে অন্ধকারে।

বঞ্চনার বৃষ্টিতে ভিজে চেতস্বান

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভাঙা বুকে

গেয়ে ওঠে বর্ষার গান। - কবি মনে বর্ষা এইভাবেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে।

রবীন্দ্রনাথ ও বর্ষা বা বর্ষা ও রবীন্দ্রনাথ – কোন কথাটা ঠিক জানি না, একে অপরের পরিপূরক। বর্ষাকে উনি পরতে পরতে উপভোগ করেছেন। বর্ষা যেন পরিপূর্ণ নারী। তিনি মনে করতেন বর্ষাই কেবলমাত্র একা, গর্বিত বিরহিনী।“বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর”- যদি শৈশবের মেঘদূত হয় তাহলে “মেঘের কোলে রোদ হেসেছে/বাদল গেছে টুটি”- চঞ্চলা চপলা নবীনা কিশোরী। সদ্য কৈশোর ছেড়ে সে গেয়ে উঠেছে-

“আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে

জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ॥”

কখনো সে বলে ওঠে,

“মোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো,

দোলে মন দোলে অকারণ হরষে।”

মন খারাপের দিনে আমরা বলতে পারি,

    “যেতে যেতে একলা পথে

        নিবেছে মোর বাতি।

     ঝড় এসেছে, ওরে, এবার

        ঝড়কে পেলেম সাথি।”

প্রকৃতি যখন রজঃস্বলা ধরণীর বুক শুষে নিচ্ছে বাদল বারি, অপার মেদুরতায় কবি বর্ষাকে আরও নিবিড় করে কাছে ডাকেন,

“এসো হে এসো, সজল ঘন,

            বাদলবরিষনে--

বিপুল তব শ্যামল স্নেহে

         এসো হে এ জীবনে।”

পিছল ঘাটে ভিজে ঘোমটায় বধূ জল তুলছে, বাঁশঝাড়ের তলা দিয়ে সংকীর্ণ পথে ভিজতে ভিজতে তারা জলের কলস নিয়ে ঘরে ফিরে যাচ্ছে, খুঁটিতে বাঁধা গরু গোয়ালে যাওয়ার জন্য হাম্বা রবে চিৎকার করছে। বর্ষা সমস্ত মাঠ, সমস্ত বন, সমস্ত গ্রাম ঘিরে ফেলেছে, কেব্ল অবিশ্রান্ত বৃষ্টি। রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় বর্ষা নিজেই স্বয়ং সম্পূর্ণা।সে নিজেই পারে প্রিয়াকে বেঁধে রাখতে। সে যে ছেয়ে থাকে কবির সাথে পাশটিতে।

“বন্ধু, রহো রহো সাথে

আজি এ সঘন শ্রাবণপ্রাতে।”

আবার বিরহে গেয়ে ওঠে,

“এমন দিনে তারে বলা যায়

এমন ঘনঘোর বরিষায়।”

কবির ভাবনায় বর্ষা সুখের জন্য নয়, তিনি মনে করেন বর্ষা মঙ্গলের জন্য। বর্ষাকে কবি তীব্র ভাবেই হৃদয়ে ধারণ করেন।

“আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার

পরানসখা বন্ধু হে আমার॥”


 

লেখিকা পরিচিতি

শাশ্বতী বাগচী, রবীন্দ্রমেলার সদস্যা।

Comments


m4nPNpRzn2BaiWQu_7.jpg

© 2023 by Train of Thoughts. Proudly created with Wix.com

bottom of page