top of page

ঋতুরঙ্গে রবীন্দ্রনাথ

বাসব মুখার্জ্জী




রবি ঠাকুর আমাদের কাছে এক বিশাল বিরাট বটবৃক্ষ। আমাদের জীবনের সুখ-দুখে হর্ষ-বিষাদে প্রেমে-অপ্রেমে তিনিই আমাদের শান্তির নীড়,আশ্রয়।জীবনের বহু রং,বহু রূপ। রঙ্গময় এই জীবনে নানান জটজটিলতা।জীবনে রয়েছে বহুস্বরিক বহুস্তরিক পর্যায় পর্ব।জীবনের সেই রঙ্গভূমের সাথে মিশে যায় নিসর্গর রঙ্গোলি-ভূমি।আর রবি ঠাকুরের হাতে পড়ে সেই প্রকৃতিও হয়ে ওঠে ঋতুরঙ্গে রঙিন।প্রকৃতি তো তাঁর কাছে কখনই শুধুমাত্র নৈসর্গিক দৃশ্যপট নয়।প্রকৃতি তাঁর কাছে কখনও বা জীবনদেবতা।কখনও বা মুক্তির আকাশ:"আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে"।তাঁর সাহিত্যভুবনে বারবার দেখা যায় তার হরেক নিদর্শন বা সাক্ষ্য।মনে পড়ে উদার বিস্তৃত সেই নিসর্গময়ীকে ঘিরে তাঁর উচ্চারণ:"আর কত দূরে নিয়ে যাবে মোরে হে সুন্দরী?'সোনারতরী'-তে ভেসে কোন্ নিরুদ্দেশে পাড়ি জমান তিনি!অভীষ্ট তীরভূমিতেই হয়তো দেখা পাবেন "মানসসুন্দরী"র!"আশা দিয়ে ভাষা দিয়ে তাহে ভালোবাসা দিয়ে" যে "মানসী-প্রতিমা" নির্মিত হয় সেই "মানসী" শুধু তো অন্তরের সামগ্রী নয়,তা যে ছড়িয়ে পড়ে নিসর্গঋতুর মধ্যেও।আর তাই "এসো হে বৈশাখ"-এ,"নীল নবঘনে"-র "আষাঢ়গগনে","এসেছে শরৎ"-এর শিউলিতে, হৈমন্তিক বাতাসে,"শীতের হাওয়ায়" "আমলকির ডালে ডালে" নাচনে কিংবা "রাঙা হাসি রাশি রাশি"র "আনন্দ বসন্ত সমাগমে"-র খুশিতে বহিরঙ্গের বাহ্যিকপ্রকৃতি আর অন্তর-অঙ্গের ঋতুরঙ্গ আমাদের আশ্রয় দেয় এই যান্ত্রিক জীবনের বৈপরীত্যে...আর তা যেন "ড্রামাটিক কনট্রাস্ট" বা "পোয়েটিক জাস্টিস" হয়ে ওঠে।আর এভাবেই ঋতুরঙ্গের সান্নিধ্যসংস্পর্শে আমাদেরও "হয়ে ওঠা"...সেখানে এক এবং একাকার হয়ে যায় পার্থিক বস্তুজগৎ আর অন্তরের অপার্থিব মায়ালোক।এই যে অচেতনে চেতন আরোপিত হল,এতেই যেন "আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ,চুনি উঠল রাঙা হয়ে"।অন্তর-চৈতন্যের সেই রঙের ছোঁয়ায় গ্রীষ্মের রুক্ষতার রুদ্রবর্ষার "পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে" স্নিগ্ধ করে "বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল"-এর অনুরাগে।...আসলে যেকোনও ঋতুই বহিরঙ্গের বাহ্যিক সীমায়িত পরিধিকে ছাড়িয়ে ছাপিয়ে সীমাকে অতিক্রম করে অসীমের দিকে অবিরত ছুটে চলার সঙ্গী হয়ে উঠেছে।আর তাই গভীরঅর্থে প্রকৃতপ্রস্তাবে প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এখানে অন্যমাত্রা পেয়েছে এই ঋতুকে ঘিরে। নৈর্ব্যক্তিক প্রকৃতির মধ্যে নিরাসক্ত কবির সাধনা অসীমকে পাবার।সেই অসীম জীবনদেবতাকে পাবার জন্য নিসর্গ যেন এখানে পুজোর উপচার।কবির জীবনদেবতার সাধনায় প্রকৃতির প্রশ্রয়...আর আমাদের কবির তাতেই আশ্রয়...তাতেই মুক্তি,তাতেই আনন্দ:"তাই তোমার আনন্দ আমার 'পর"...ঋতুরঙ্গের প্রসঙ্গে অনুষঙ্গে এভাবেই কবির সাহিত্যসঙ্গটি রূপের সীমানা ছাড়িয়ে "অরূপ তোমার বাণী" হয়ে উঠেছে...ঋতুরঙ্গ বা অন্যার্থে অন্যকথায় প্রকৃতিপ্রেম শেষঅবধি শেষপর্যন্ত নিরন্তর অনন্তর পূজায় পর্যবসিত হয়েছে:"সীমার মাঝে, অসীম তুমি বাজাও আপন সুর/আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর"...


লেখক পরিচিতি

বাসব মুখার্জ্জী,রবীন্দ্রমেলার সদস্য।


Comments


m4nPNpRzn2BaiWQu_7.jpg

© 2023 by Train of Thoughts. Proudly created with Wix.com

bottom of page