চিরপ্রশ্নের বাণী
- Rabindramela Berhampore
- Oct 22, 2020
- 2 min read
Updated: Jan 19, 2021
ভবতোষ দত্ত

রবীন্দ্রনাথ আমাদের চিরকালের গর্ব। কতভাবে তাঁকে আমরা দেখি- লোকালয়ে, প্রকৃতির উদারক্ষেত্রে , সজনে নির্জনে, ধ্যানে কল্পনায়, দেশে-বিদেশে, দুর্ভিক্ষে রাষ্ট্রবিপ্লবে। তিনি আমাদের সত্যাগসহন বন্ধু।তাঁর বাণী বাজে আমাদের হৃদয়তন্ত্রীতে।তাঁর কীর্তি সৌরভে আমাদের এই নিত্য দেখা নিত্য চেনা জীবন রমনীয় হয়ে ওঠে। তাঁর কর্মযোগ দেয় আমাদের নবযৌবনের প্রাণশক্তি। অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হল, এখন রবীন্দ্রনাথ আছেন আমাদের ঘরে বাইরে, চেতনায় অবচেতনায়। রবীন্দ্রনাথকে দেখেনি আজকের শিশুকিশোর তরুণ। যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে দেখেছেন, তাঁরা ষাট পেরিয়ে গেছেন। একদিন তাঁদের সংখ্যাও ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু ফুরিয়ে যাবে না ওই অসাধারণ মহামানবের শ্বাশ্বত ব্যক্তিত্বের প্রভা। আমাদের সংস্কৃতি ও সাধনাকে সেই প্রভাই রেখেছে চির উজ্জ্বল করে।
এসব কথা কখনও কখনও শোনায় আত্মতুষ্টির মতো। তিনি যে আছেন এই ভেবেই আমাদের আনন্দ। জীব যেমন পূর্বপুরুষদের গৌরব স্মৃতিকে সন্তর্পণে রক্ষা করে তেমনি করেই রবীন্দ্রনাথকে যেন আমরা সযত্নে সসম্ভ্রমে রক্ষা করে চলেছি।। স্মৃতির জগৎ থেকে যখন বর্তমানের পথে নেমে আসি তখন কবির সেই আনন্দ মুর্তিখানি প্রাত্যহিকতার ধূলিজালে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। যখন দেখি যে তারুণ্যের জয়গান কবি করেছিলেন চিরসুন্দর প্রাণের অভিব্যক্তি বলে, সেই তারুণ্যই হিংসায় আত্মহননে প্রবৃত্ত, উদার সুন্দরের পরিবর্তে সংকীর্ণ ভোগবৃত্তিতে লিপ্ত, আত্মবন্ধুজনকে দেখি ক্ষুদ্র স্বার্থচেতনায় মগ্ন হতে, নিসর্গ প্রকৃতির সহজ আত্মপ্রকাশকে যখন দেখি ক্লিন্ন বাসনায় হারিয়ে যেতে- তখন মনে হয় কবির চর্চা কি আমাদের জন্য নয়?
এমন প্রশ্নের সন্মুখীন আমরা প্রতি মুহূর্তেই হচ্ছি। তবে কি আজকের এই পৃথিবীর বাস্তবকে মেনে নিয়ে এর মুখোমুখি হতে হবে-এ শিক্ষা রবীন্দ্রনাথের সৌন্দর্য সাধনায় নেই? তপোবন পরিবেশে মানুষ গড়ে তোলার কথা কবি চিন্তা করেছিলেন, আজ এ চেষ্টা যেন হাস্যকর শোনায়। অথচ শিক্ষালয়ে আমরা কবির কথা মুখস্থ করে যাই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। কবির পরামানব দর্শন সমাজতান্ত্রিক ভাবনার যুগে শোনায় যেন রূপকথা।
রবীন্দ্রনাথ কি মেলাবেন আদর্শের সঙ্গে বাস্তবকে, স্বপ্নের সঙ্গে জাগরণকে? প্রতি বছর যখন জন্মোৎসব পালন করি, বড় ব্যাকুল হয়ে পড়ি। এ প্রশ্নটা বিদ্ধ করতে থাকে মনকে। রবীন্দ্রনাথ অসাধারণ, রবীন্দ্রনাথ চিরজীবী। তাঁর আসন বুদ্ধের সঙ্গে, উপনিষদের ঋষির সঙ্গে। বুদ্ধ যদি আজ ব্যর্থ হয়ে থাকেন, তবে রবীন্দ্রনাথও ব্যর্থ। আজ হৃদয় মন থেকে একটি প্রার্থনাই নিয়ত উৎসারিত হচ্ছে- সঃ নো বুদ্ধ্যা শুভায় সংযুনক্তু।
*লেখাটি রবীন্দ্রমেলা স্মরণিকা, ত্রয়োবিংশতি বর্ষ, ১৪০২ থেকে সংগৃহীত

লেখক পরিচিতি
ভবতোষ দত্ত, রবীন্দ্র অধ্যাপক বিশ্বভারতী, রবীন্দ্র গবেষক ছিলেন। ১৯৮৬ সালে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রে যোগ দেন। তাঁর লেখা গ্রন্থ- চিন্তানায়ক বঙ্কিমচন্দ্র, কাব্যবাণী, বাঙালির সাহিত্য, রবীন্দ্র চিন্তাচর্চা, রবীন্দ্র সাহিত্য প্রসঙ্গ, বঙ্কিম ভাবনালোক,ইত্যাদি।
Comments