পড়ুক ঝরে, বুকের পরে
- Rabindramela Berhampore
- Aug 7, 2020
- 2 min read
সুপর্ণা দাস মজুমদার

‘বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এলো বান’- ‘জল পড়ে পাতা নড়ে-র কবিকে ‘যেন অন্তর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল’। রবিকবি বর্ষাকে ' নব নব রূপে' জানার মাধ্যমে এই ভাবনাকে চিরকালীন করে বেঁধে রেখেছেন তাঁর হৃদয়ের ছন্দে।
গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি গরজে গগনে গরজে- আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে বর্ষার আগমন বার্তা ঘোষিত হল।এই চঞ্চল সজল পবন বেগে উদভ্রান্ত মেঘে কবির মনে আষাঢ়ের মৃদঙ্গ বেজে উঠল-
“নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে
তিল ঠাঁই আর নাহি রে।"
কবির অনুভবে এসেছে উচ্ছৃঙ্খল বাতাসের দুরন্তপনা। কবিকে ‘কী হাওয়ায় মাতালো’ আর সেই অনুভবে বহুযুগের ওপারের কবির মতো ‘মেঘদূত’ কবিতায় বর্ষার জলছবি আঁকলেন-
“আজি অন্ধকার দিবা বৃষ্টি ঝরঝর,
দুরন্ত পবন অতি,...”
আষাঢ়-শ্রাবণের ছন্দে ভেজা বাতাসে তাঁর কবিমনও উতলা।বাদল বাউল একতারা বাজিয়ে বৃষ্টিকে আহ্বান করল-“এসো নীপ বনে ছায়াবীথি তলে
এসো--”
বর্ষার ‘নবীন মেঘের সুর লেগেছে’ কবির প্রাণে। ভানু কবি তাঁর পদাবলীর কালো ক্যানভাসে ঘোর ঘনঘটার যে ভয়ংকর অথচ সুন্দর ছবি এঁকেছেন তা তাঁর ছোটবেলায় অনুভূত বর্ষার ভয়ঙ্কর উন্মাতাল রূপ।
আকাশে মেঘের পরে মেঘ জমে যখন চারিদিক আবছা আঁধারে ভরে যায় তখন চির প্রিয়তম জীবনদেবতার সঙ্গে মিলন-পিয়াসী কবির বাণী মল্লারে ধ্বনিত হয়-
‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার
পরান সখা বন্ধু হে আমার’।
এই গভীর আকুতি এমনই তীব্র যে, এ-গানের আধ্যাত্মিকতা শ্রাবণের বাস্তবিকতাকে ছাড়িয়ে যায়।
আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি গ্রামবাংলার বর্ষণমুখর বর্ষা-প্রকৃতি একইরকম আবেগে রবীন্দ্রনাথের মন টেনেছে।প্রথম কদমফুল হাতে বর্ষামঙ্গলের কবি বলে উঠেছেন ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’। শিলাইদহে বোটে করে নদীবক্ষে ঘুরে বেড়ানোর সময় কবি দেখেছেন, অনুভব করেছেন বর্ষার শ্যামলসুন্দর রূপ।আর তাই আকাশের মনের কথা কবির কথা হয়ে ঝরে পড়েছে-ঝরঝর বরিষে বারিধারা।কবির হৃদয় ময়ূরের মতন নেচে ওঠে। রবীন্দ্রনাথের গানে কৃষ্ণকলি, মেঘলা আকাশ আর কালো হরিণ চোখ মিলেমিশে একাকার।
বর্ষা ঋতুটা বিশেষভাবে কবির ঋতু।বজ্রমাণিক দিয়ে আষাঢ়ে যে মালা তিনি গেঁথেছিলেন শ্রাবণের বর্ষণমুখর দিনে একেলা পথে সেই বাতি নিবেছিল।
“এ গান আমার শ্রাবণে শ্রাবণে তব বিস্মৃতিস্রোতের প্লাবনে॥”

লেখিকা পরিচিতি
সুপর্ণা দাস মজুমদার, বহরমপুর রবীন্দ্রমেলার সদস্যা।
Comments