সুপর্ণা দাস মজুমদার
![](https://static.wixstatic.com/media/c9f588_c85d3c9416fb4d8fa2590cad1df59da8~mv2.jpg/v1/fill/w_800,h_400,al_c,q_80,enc_avif,quality_auto/c9f588_c85d3c9416fb4d8fa2590cad1df59da8~mv2.jpg)
সবুজ শ্যামল আর পাখির গুঞ্জরণে মুখরিত আমাদের প্রিয় স্বদেশ অপূর্ব রূপ ও অফুরান সম্ভার নিয়ে প্রতিবছর আবর্তিত হয় ছয়ঋতু।আর এই ঋতুরঙ্গমঞ্চে অগ্নিখরা গ্রীষ্মেরআতঙ্ক, বর্ষার বিষন্নতা শেষ হয়ে গেলে শিউলি ঝরানো পথে অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে নিঃশব্দে চরণ ফেলে আসে শরৎ ঝিমিয়ে যাওয়া প্রকৃতি যেন হঠাৎই প্রাণ পেয়ে ফুরফুরে হয়ে কেয়াপাতার নৌকা গড়িয়ে তালদিঘিতে ভাসিয়ে দেয়, আর তা দেখে কবির মন তখন পুলকিত হয়ে গেয়ে ওঠে-
"আলোর কমলবনে
বাহির হয়ে বিহার করে যে দিল মনেমনে,
আজ সোনার কাঁকন বাজে
আজি প্রভাত কিরণ মাঝে
হাওয়ায় কাঁপে আঁচলখানি ছড়ায় ক্ষণে ক্ষণে।"
তবে রবীন্দ্রনাথ শরৎ-বিভায় যেন তাঁর মন হারিয়ে ফেলেছেন,হারিয়ে ফেলেছেন তাঁর দ্বিধা-বিন্যাস।রবীন্দ্রনাথ শরতের কাছ থেকেই শরতের রূপ নিয়ে তাঁর রচনার সৃষ্টিকে অলংকৃত করেছেন নিখুঁত ভালোবাসায়।বর্ষার ঘনঘটা কেটে গিয়ে যখন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় উড়ে বেড়ায় বকপাঁতি, তখন রবীন্দ্রনাথের মনও মুক্তির আনন্দে বলে ওঠে-
"অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া,
দেখি নাই কিছু দেখি নাই এমন তরণী বাওয়া।"
মনের আয়নায় নয়ন ভুলানো শরৎকে দেখে কবি বারবার বিমোহিত হন।নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে যে শরৎ শুধু আনন্দ আনে তা নয়, প্রিয় অথবা প্রিয়ার কথাও মনের গহীন কোণে ভেসে ওঠে-তাও কবির ভাবনাতে ধরা পড়েছে-
"আজি শরত তপনে প্রভাত স্বপনে কীজানি পরাণ কি যে চায়,
ওই শেফালির শাখে কী বলিয়া ডাকে বিহগাবিহগী কী যে গায় গো"
শরৎ এলে কাশের শোভা আর সুনীল আকাশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে আমরা অভিভূত হই।শারদ-প্রভাতে শ্যামল অঙ্গের অমল শোভার ঝলসানো মধুর মুরতি রবিকবির মানস ভুবনে প্রতিভাত হয়----
"জননী তোমার আহ্বান লিপি
পাঠায়ে দিয়েছো ভুবনে।"
নদীর কিনারে কাশগুচ্ছে মৃদুমন্দ হাওয়ায় দোলা আর ঝরা মালতীর সুবাসে মাতাল হয়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রিয় শরৎকে স্বাগত জানিয়ে লিখেছেনঃ
"আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ
আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা"...
শরতের শিশিরসিক্ত শিউলিও রবিকবির গান-কবিতায় সুন্দরভাবে ধরা দিয়েছে।কবির প্রাণ কণিকায় শরতের শুভ্র সুন্দর সুষমা বিরাজিত।তাঁর সৃষ্টির মূল রহস্য " সীমা অসীমের লীলা"।তাই তিনি বলেন-
'সীমার মাঝে অসীম তুমি
বাজাও আপন সুর"......
আবার "শেষসপ্তক"কাব্যে ধরা পড়ে তাঁর কাব্যময় প্রকাশ---
"আজ শরতের আলোয় এই যে চেয়ে দেখি,
মনে হয় এ যেন আমার প্রথম দেখা"....
ষড়্-ঋতুর সব ঋতুর মতই শরৎ ও কবিকে অনন্যমাত্রায় আন্দোলিত করেছে।তাই তিনি নদীর কূলে কূলে ঘুরে ঘুরে ক্ষেতে ক্ষেতে বিশাল আকাশের নীচে নিজের মনকে মেলে দিয়ে প্রকৃতি পাঠশালার ছাত্র হয়ে উঠেছেন।তাই তো সহজ সরল সুন্দর করে তিনি আমাদের মনের কথা নিজের লেখার মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেন-
" শরতে আজ কোন অতিথি এলো প্রাণের দ্বারে,
আনন্দগান গা রে হৃদয় আনন্দগান গা রে"...
তিনি বিশ্বকে দেখেছেন শিশুর সরলতায়, শুদ্ধতায়, শুভ্রতায়।তাই যখন যা কিছু তাঁর চোখে পড়েছে তাই তিনি লিখেছেন পরম মমতায়।
"ওগো কাণ্ডারী কে গো তুমি, কার হাসি কান্নার ধন,
ভেবে মরে মোর মন-
কোন সুরে আজ বাঁধিবে যন্ত্র কী মন্ত্র হবে গাওয়া"...
![](https://static.wixstatic.com/media/c9f588_654f14dc90824a6fb116ce9d34ee2a24~mv2.jpg/v1/fill/w_600,h_900,al_c,q_85,enc_avif,quality_auto/c9f588_654f14dc90824a6fb116ce9d34ee2a24~mv2.jpg)
লেখিকা পরিচিতি
সুপর্ণা দাস মজুমদার, বহরমপুর রবীন্দ্রমেলার সদস্যা।
Comentarios