top of page

রবীন্দ্রনাথ ও নান্দনিকতা

বাসব মুখার্জ্জী



সাহিত্যে নন্দনতত্ত্বের বিষয়টি বিশেষ চিন্তাভাবনার দাবি রাখে।প্রিজমের মতোই নানান দ্যুতি ঠিকরে পড়েছে এই নান্দনিক তত্ত্বটিকে ঘিরে।শিল্প ও সাহিত্যের তাত্ত্বিক এবং প্রয়োগরীতিগত ক্ষেত্রে নন্দনকলার এক বিশিষ্ট স্থান রয়েছে।আর রবীন্দ্র সাহিত্যভুবনে এ বিষয়টি যে এক অন্যতর মাত্রা নেবে তা তো বলাইবাহুল্য।রবীন্দ্রসাহিত্য তো আর কেবল নিছক ছকবদ্ধ কিছু অক্ষরমালা নয়,তা যে এক দর্শন।রবি ঠাকুরের নিজস্ব বিশিষ্ট এক দর্শন সেই নান্দনিক তত্ত্বকে অন্যতর এক মাত্রা দিয়েছে।শিল্পসাহিত্যে নান্দনিকতা সৌন্দর্যবোধের প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গে উচ্চারিত হয়।আবার এই 'নন্দন' শব্দটিকে একটু এদিকওদিকে ভাঙলে আনন্দ শব্দটিকেও খুঁজে পাওয়া যেতেই পারে।রবীন্দ্রসাহিত্যে এই সৌন্দর্যচেতনা এবং আনন্দভাবনা এই দুই-ই রবি ঠাকুরের বিশেষ দর্শনজাত হয়ে উদ্ভাসিত আর উন্মোচিত করেছে আমাদের মনন আর চৈতন্যকে।রবি ঠাকুরের সীমা-অসীমের তত্ত্বটি তো তাঁর কবিতা বা কথাসাহিত্যে বারেবারেই ঘুরেফিরে এসেছে।"সীমার মাঝে অসীম"-এর সুরটি অন্বেষণের মধ্যে যে সেই অন্তরের সৌন্দর্যচেতনাটিই জাগ্রত রয়েছে।আর তাতেই তো কবির "পথ-চাওয়াতেই আনন্দ"।বহিরঙ্গের শুষ্কতা শূন্যতাকে সরিয়ে রেখে অন্তরঙ্গের সৌন্দর্যায়নেই কবির "মুক্তি আলোয় আলোয়"।তাই "মানসী" বা "মানসসুন্দরী" শেষ অবধি কোনও এক রমণী নয়,অন্তরাত্মার সৌন্দর্য-সৌকর্যের আহ্বানধ্বনিকে চিনে নেবার মন্ত্র হয়ে ওঠে।সাহিত্যপাঠের ক্ষেত্রে এক "সহৃদয় হৃদয় সম্বাদী" মনকে তিনি চিনিয়ে দিয়েছিলেন।সেই মনটি লেখক,পাঠক আর সমালোচক এই তিন ভিত্তিভূমিকে ত্রিবেণীবন্ধনে বেঁধে ফেলতে পারে।এ ও যে এক নতুন আনন্দসঞ্চারী আবাহনীসুর।আর তাতেই যে সৌন্দর্যবোধটি জেগে ওঠে ভিন্নতর এক মাত্রায়।আসলে তাত্ত্বিক পাঠ নয়,তিনি সাহিত্যে "সত্য-শিব-সুন্দর"-এর সাধনা-আরাধনা করেছিলেন।তাঁর সাহিত্যবিশ্বে তাই "আকাশভরা সূর্যতারা বিশ্বভরা প্রাণ"-এর "বিস্ময়" জাগে।সেই "বিস্ময়" একই সঙ্গে সৌন্দর্যের আবার আনন্দেরও বটে।"তাই তোমার আনন্দ আমার 'পর" এর সেই আনন্দে যে নান্দনিক সৌন্দর্য,তারই অন্য নাম বা নামান্তরে তিনিই রবি ঠাকুর।

লেখক পরিচিতি

বাসব মুখার্জী, রবীন্দ্রমেলার সদস্য

Comments


m4nPNpRzn2BaiWQu_7.jpg

© 2023 by Train of Thoughts. Proudly created with Wix.com

bottom of page