বাসব মুখার্জ্জী
![](https://static.wixstatic.com/media/c9f588_9f1da04aea94420a8432b9c3df883619~mv2.jpg/v1/fill/w_800,h_400,al_c,q_80,enc_avif,quality_auto/c9f588_9f1da04aea94420a8432b9c3df883619~mv2.jpg)
সুফিসাধনার বিষয়টির এক ঐতিহ্যলালিত ইতিহাস আছে।এক গভীর তত্ত্বকথার আবহ সেখানে।আরাধ্য "মনের মানুষ" বা "পরম" একজন সেই সাধনার প্রধান।সুফিসাধনার এই বিষয়টি রবীন্দ্রভাবনাতে যখন আসে তখন তা অন্যতর এক বিশিষ্ট মাত্রায় ব্যঞ্জিত হয়ে যায়।রবীন্দ্রদর্শনের আলোকে সুফিচেতনা সেখানে ভাস্বর।রবীন্দ্রদর্শনের আলোকরশ্মি রবি ঠাকুরের সাহিত্যভুবনে প্রিজমের মতোই ঠিকরে ছিটকে আলোকিত করে রয়েছে তার "গভীর বাণী" নিয়ে।ক্রান্তদর্শী কবির সংবেদনশীল মন একদিকে তাঁর ছোটোগল্প উপন্যাস নাটক আর অন্যদিকে কাব্য এবং সঙ্গীতে সেই দর্শনটিকে তুলে ধরেছে।রবি ঠাকুর কথিত "সীমা আর অসীম"-এর সেই দর্শনটি তো বারে বারেই ঘুরেফিরে এসেছে তার সাহিত্যনির্মাণে।তাই খাঁচার আর বনের "দুই পাখি"কে সেখানে যেমন দেখতে পাই তেমনি "শেষের কবিতা"র "দিঘিভরা জল" আর "ঘড়ায় তোলা জল"-এর তুলনাও সেখানে আসে।মনে পড়ে 'ঘরে-বাইরে' উপন্যাসের কথা।সেখানে বিমলাকে মাঝখানে রেখে নিখিলেশ আর সন্দীপের যে আলোড়ন তাকে যেমন রাজনৈতিকভাবে দেখা যায়,তেমনই সন্দীপের চেতনাকে সীমা আর নিখিলেশের মননকে অসীম ধরলে শেষঅবধি শেষবিচারে শেষপর্যন্ত ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ-এর দিকে যাত্রা বা অভিযাত্রাপথটির রূপরেখা দেখা যায়।এ যেন অন্য অর্থে সেই "পরম"কে খুঁজে নেবার সাধনা।'ডাকঘর' বা 'রক্তকরবী' নাটকেও তো সাংকেতিকতায় রূপকে প্রতীকে তারই ইশারা ইঙ্গিত ব্যঞ্জিত দ্যোতিত।"জীবন যখন শুকায়ে যায়" তখন "জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে" সেই "হে বন্ধু হে প্রিয়"কেই আঁকড়ে ধরার সাধনাতেই রবি ঠাকুরের বিশিষ্ট জীবনদর্শনটি ফুটে উঠেছে।আর সেই দর্শন অধ্যাত্মবোধ আর সুফিসাধনা আরাধনার এক অন্যতর মাত্রায় ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত ভাস্বর।এবং এইসব ভাবনা আসলে ক্ষুদ্র আমি থেকে বৃহৎ আমি বা অন্যার্থে জীবন থেকে মহাজীবন অর্থাৎ বিশেষ থেকে নির্বিশেষের দিকে যাত্রার কথাই বলে।রবীন্দ্রচেতনায় এইভাবেই সেই "পরম" কে আরাধনা করা হয়।আর তাই তিনি হয়তো "সোনার তরী"তে ভেসে যাওয়া কোনও এক অজানার টানে ছুটে চলার দ্যোতনার বাহক।তিনি যে "প্রাণের মানুষ":"আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে/তাই হেরি তায় সকলখানে"।সর্বত্রই তাঁর অবস্থান,শুধু খুঁজে নিতে হবে:"নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে,রয়েছ নয়নে নয়নে"।তাঁকে দেখতে হবে অন্তরের আলোয়:"চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে/অন্তরে আজ দেখব যখন আলোক নাহিরে"।
তিনি যে হৃদয়ে বাস করেন:"আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি"।সেইকারণেই তো "মাঝে মাঝে তব দেখা পাই,চিরদিন কেন পাইনা"র এত আর্তি-আকুলতা।আর তাই রাণী সুদর্শনা তাঁকে বহিরঙ্গের রূপে দেখতে পান না,সুরঙ্গমা অন্তরের সৌন্দর্যের আলোয় তাঁকে অনুভব করেন।আসলে "দেবতারে প্রিয় করি,প্রিয়েরে দেবতা" এই ভাবনাটিই সেখানে প্রবল হয়ে ওঠে।দেশকালের সীমানা ছাড়িয়ে সকল দেশের সকল কালের সবার "রাজা" বা অন্যকথায় "রাজার রাজত্বে" আমরা সবাই রাজা!সেখানে সকল ব্যবধান ঘুচে যায়,সকল "দ্বন্দ্ববিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো "এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে উঠি আমরা...আর এটাই রবি ঠাকুরে সেই বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক চেতনা যা সুফিভাবনার সেই "মনের মানুষ"-এর সাথে মিলে যায় অন্য এক সুরে।তাই "দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা"র সঙ্গে "ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে ও বন্ধু আমার" মিলেমিশে একাকার...আর সেই বন্ধু যে আর কেউ নন,স্বয়ং সেই "পরম" "মনের মানুষ"...
![](https://static.wixstatic.com/media/c9f588_88a64d08a0bf4b3dbae3a3242472f6a9~mv2.jpg/v1/fill/w_200,h_300,al_c,q_80,enc_avif,quality_auto/c9f588_88a64d08a0bf4b3dbae3a3242472f6a9~mv2.jpg)
লেখক পরিচিতি
বাসব মুখার্জ্জী,রবীন্দ্রমেলার সদস্য।
Comentarios