রবীন্দ্রসাহিত্যে আধুনিকতা
- Rabindramela Berhampore
- Aug 7, 2020
- 3 min read
জবা দাশগুপ্ত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর --- বাঙালীর সংস্কৃতি আকাশে ধ্রুবতারার মতো এক অতি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি সমকালীন তো বটেই , তিনি চিরন্তন। তাঁর সাহিত্য কালের গন্ডী ছাড়িয়ে চিরকালীন। তাঁর রচনা যে শুধু আধুনিক তাই ই নয় বরং কোন কোন ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক ও বটে।
রবীন্দ্রনাথ ও আধুনিকতা নিয়ে অজস্র পুস্তক ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক গন। তার মধ্যে বিখ্যাত লেখক 'আবু সৈয়দ আইয়ুব' এর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরন করতে হয়। এছাড়াও আছেন অজস্র কৃতী ও গুণী মানুষ জন।
তাই আমার মতো একজন না -- লেখকের পক্ষে রবীন্দ্রসাহিত্যে আধুনিকতা নিয়ে লেখা --- কবির ভাষায় " অহো কি দুঃসহ স্পর্ধা !!!!"
কিন্তু কি করবো ? শ্রদ্ধেয় সম্পাদক মহাশয়ের অনুরোধ ও তাগাদা।
তাই অগত্যা ও অবশেষে.....
কিন্তু সমগ্র রবীন্দ্র সাহিত্যের আধুনিকতার বিশ্লষন এই স্বল্প পরিসরে মোটেই সম্ভবপর নয়, অন্তত আমার পক্ষে।
তাই রবীন্দ্রসৃষ্ট তিনটি রচনার উল্লেখ আমি এই লেখায় করছি। তিনটি সাহিত্যেরই রচনাকাল 1930--1940 এই দশকের মধ্যে। অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় পঁচাত্তর থেকে আটাত্তর বছর আগে। রচনাত্রয় হল-যথাক্রমে শেষের কবিতা , ল্যাবরেটরী ও রবিবার।
প্রসংগত উল্লেখ্য -- ল্যাবরেটরী ও রবিবারের review করেছিলেন তৎকালীন আধুনিক গদ্যকার শ্রী প্রেমেন্দ্র মিত্র মহাশয়, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথেরই ইচ্ছায়।
প্রথমে আমি আসি শেষের কবিতার প্রসঙ্গে। শেষের কবিতার নায়ক-অমিত , আমরা সকলেই জানি। কিন্তু যদি আলাদা করে প্রেমিক অমিত কে আমরা দেখি --- তাহলে দেখতে পাই তার প্রেমের উদ্দামতা এবং অদ্ভুত smartness.যার সঙ্গে বর্ত্তমান কালের অজস্র তরুণ প্রেমিক প্রবরদের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।হয়ত বা কোন কোন ক্ষেত্রে অনেককে ছাপিয়ে যায় অমিত। আর আজ থেকে প্রায় আটাত্তর/ ঊনআশি বছর আগে কেতকী থেকে " কেটি " হওয়া ও মহিলাদের সিগারেট সেবন আমাদের অবাক করে না কি !!!! না কি তৎকালীন বিদগ্ধ মহল বিস্মিত হন নি ?
তাই মেট্রিয়ার্কাল সমাজের স্বপ্ন বা দূরদর্শিতা ছিলো রববীন্দ্রনাথের ভাবনায়। যার প্রতিফলন বর্ত্তমানে আমরা খুব ক্ষুদ্র গন্ডী তে মাঝে মাঝে দেখতে পাই , তবে ভবিষ্যতে হয়তো আমরা দেখবো মেট্রিয়ার্কাল সমাজ ! কারণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সত্যদ্রষ্টা ঋষি পুরুষ --- একথা প্রমাণিত।
ল্যাবরেটরীর আর একটি বিষয়ের উল্লেখ করার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। যা তাঁর এই রচনার আটাত্তর বছর পরেও তীব্র ভাবে আধুনিক বা সমকালীন। সেটি হলো পোষাকের বিবরণ।
ল্যাবরেটারীর নায়িকা সোহিনী তার কণ্যা নীলা কে --হবু জামাই রেবতীর সঙ্গে পরিচয় পর্বে যে সাজে সাজিয়েছিলেন...তার বর্ণনা রবীন্দ্রনাথের ভাষায়....
" ...তাকে পড়িয়েছে নীলচে সবুজ বেনারসী শাড়ি। ভিতর থেকে দেখা যায় বাসন্তী রঙের কাঁচুলী। কপালে তার কুঙ্কুমের ফোঁটা , সুক্ষ একটু কাজলের রেখা চোখে , কাঁধের কাছে ঝুলে পড়া গুচ্ছকরা খোঁপা , পায়ে কালো চামড়ার 'পরে লাল মখমলের কাজ করা স্যান্ডেল।"
আহা---যেন বর্ত্তমানের কোন পত্রিকার প্রচ্ছদ মডেল বা চিত্রাভিনেত্রী। শাড়ি ও ব্লাউজের রং এর অপূর্ব মেলবন্ধন। যেন বর্ত্তমানের কোন ফ্যাসান ডিজাইনারের নির্মাণ!!!!
অত্যাধুনিক রবীন্দ্রনাথ তাঁর ল্যাবরেটারী রচনায় প্রতি ছত্রে ছত্র দেখিয়েছেন....আধুনিকতার চূড়ান্ত নিদর্শন !!!! পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যাবস্থায় তিনি 'মেট্রিয়ার্কাল ' সমাজের উল্লখ করেছেন। যে সমাজে মেয়েরাই হচ্ছে পুরুষের সেরা।
এটা সাধারণতঃ আমরা দ্রাবিড় সমাজে দেখতে পাই...
কিন্তু বাঙালী সমাজে....? নৈব নৈব চ।কোন এক মধ্যযুগে লীলাবতী, মৈত্রেয়ী, খনা হয়তো ছিলেন কিন্তু তাদেরও কম হেনস্থা সহ্য করতে হয় নি।
এইবার আসি ' রবিবার ' প্রসঙ্গে। এখানে নামের ক্ষত্রে অভয়াচরণ হয়েছে অভীক। তার থেকে অভি। আর বিভা হয়েছে -বী। আধুনিকতায় নাম কে ছোট করে সহজ উচ্চারণ করে নেওয়াটাই রীতি। আর বিশেষ রাজনৈতিক মতাবলম্বী দের তথাকথিত নাস্তিকতা--- এই রচনায় ছত্রে ছত্রে প্রকাশিত। প্রচন্ড শিক্ষিতা বিভা বর্ত্তমান সময়ের পন্ডিতমণ্য মহিলাদের প্রতিনিধি যেন !
আরও অনেক কিছুই ছিলো উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ----- ঐ যে বললাম পরিসর স্বল্প। পরে কখনও চেষ্টা করা যাবে ,বিশদ আলোচনার।
শ্রদ্ধেয় পাঠকগণ -- ভুল ত্রুটি এবং অপারগতা ক্ষমা কযবেন...এই আশা রেখে এবং রবীন্দ্রসাহিত্যের বিশালতার পদপ্রান্তে দাঁড়িয়ে পঁচাত্তর থেকে অটাত্তর বছর পূর্বের আধুনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়ে আমার লেখার ইতি টানলাম। ধন্যবাদ।

লেখিকা পরিচিতি
জবা দাশগুপ্ত, রবীন্দ্রমেলার সদস্যা
Comments